এস আই মাহমুদুল হাসান এস আই সুদিপ কুমারের দস্যুতা মামলার সাফল্য আটক -তিন দস্যু


রাকিবুল ইসলাম সোহাগ 

সাভারের একটি  ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাকিংয়ের টাকা ছিনতাই করে কেউ কিনেছেন জমি, কেউ তৈরি করছেন বাড়ি। সাভারে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ২৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে এমন সব তথ্য। উদ্ধার হয়েছে ছিনতাইয়ের ১১ লাখ টাকা। জব্দ করা হয়েছে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত প্রাইভেটার কারটিও।

রবিবার (২৮ মে) দুপুর ১টার দিকে সাভার মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান। এর আগে গতকাল ২৭ মে পটুয়াখালী জেলার দশমিনা থানার আদর্শনগর এলাকা থেকে জসিম উদ্দিন নামের এক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে বাকি দুজনকে গ্রেপ্তার করে সাভার মডেল থানার পুলিশ।

গ্রেপ্তা কৃতরা হলেন মাগুরা সদর থানার রাঘবদাইড় গ্রামের মৃত জয়নুদ্দিনের ছেলে মো. শিমুল (৩৬), বরিশাল জেলার গৌরনদী থানার বাটাজোড় গ্রামের মৃত কাদের বেপারীর ছেলে মো. তাওহিদ ইসলাম (৪৫) ও পটুয়াখালী জেলার দশমিনা থানার ঠাকুরহাট বাজারের রামবল্লভ এলাকার কালু হাওলাদারের ছেলে মো. জসিম উদ্দিন (৪৫)।

তারা সবাই পেশাদার ছিনতাইকারী। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গত ৭ মে সকাল ১১টার দিকে সাভারের উলাইলের আল-মাদানী রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে গাড়ি শনাক্ত করা হয়।

পরে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় তিন আসামির অবস্থান শনাক্ত করে গতকাল সকাল ১০টার দিকে পটুয়াখালীর দশমিনা থানার আদর্শনগর এলাকার নিজ বাড়ি থেকে জসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে জসীমের দেওয়া তথ্যমতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে রাত ১০টার দিকে শিমুল ও তাওহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকেও ছয় লাখ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ও পুলিশের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার সময় শিমুল ও চালক তাওহিদ সাদা প্রাইভেট কার নিয়ে মহাসড়কের এক পাশে অপেক্ষা করতে থাকেন।

কিছুক্ষণ পর টাকাভর্তি ব্যাগ নিয়ে এজেন্ট ব্যাকিং মার্কেটিং অফিসার হাবিবুর রহমান ও নিরাপত্তাকর্মী নাইম মহাসড়কের ওপার থেকে এপারে পার হয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। নাইমের কাঁধে ছিল টাকার ব্যাগ। এ সময় আগে থেকে ওত পেতে থাকা প্রাইভেট কারটি মুহূর্তেই কাছে এসে গাড়ির জানালা খুলে ব্যাগ টেনে নেয়। এর আগে তাদের আরেক সদস্য জসিম ভুক্তভোগীদের পেছনে থেকে তাদের অবস্থান শিমুলকে অবহিত করছিলেন। পরে তারা সবাই একত্র হয়ে টাকা ভাগ করে নেন।

গ্রেপ্তার তিনজনই ঘটনার সাথে জড়িত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। তবে ঘটনার সাথে আরো কেউ জড়িত আছে কি না, বিষয়টি নিশ্চিত হতে গ্রেপ্তার তিনজনের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী ইসলামী ব্যাংকের উলাইল এজেন্ট শাখার মার্কেটিং অফিসার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘৭ মে সকাল ১১টার দিকে আমাদের সাভারের উলাইল এজেন্ট থেকে জমাকৃত টাকা হেমায়েতপুরের মূল শাখায় জমা দেওয়ার জন্য যাচ্ছিলাম। এ সময় আমার সাথে নিরাপত্তাকর্মী নাইম ইসলাম ছিল। পরে বাসে ওঠার জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়াতেই একটি প্রাইভেট কার এসে নাইমের কাঁধে থাকা ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যায়। এতে নাইম পড়ে যায়। আমি ও নাইম গাড়ির পেছনে দৌড়ালেও গাড়িটিকেও ধরতে পারিনি। গাড়ির নম্বরটিও বুঝতে পারিনি। পরে থানায় মামলা করি।’

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া সাভার মডেল থানার,এস আই মাহমুদুল হাসান ও (এসআই) সুদীপ কুমার গোপ বলেন, ‘মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করাটা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। মামলা রুজু হওয়ার পর থেকেই আমরা গুরুত্বের সাথে কাজ করছিলাম। প্রথমে প্রাইভেট কারটি শনাক্ত করি; কিন্তু তারা ভুল তথ্য দিয়ে গাড়ি কিনেছিল। তাদের উদ্দেশ্যেই ছিল অপরাধে ব্যবহার করা। পরে গাড়ির আগের মালিকের সন্ধান পাই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। তার কাছ থেকে একটি মোবাইল নম্বরের সূত্র পাই। কিন্তু সেই মোবাইল নম্বর ব্যবহারকারীর ঠিকানা নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। কিন্তু সেই কিশোর ছেলে চুরির দায়ে জেলহাজতে। তার সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারি মোবাইল ও সিমটি তার প্রতিবেশীর বাসা থেকে চুরি করেছিল। পরে সেই প্রতিবেশী জসিমের বাসায় গেলেও তা তালাবদ্ধ পাই। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করলে রহস্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে। জসিমের সূত্র ধরে বাকি দুজন শিমুল ও তাওহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে জসিম তার ভাগের টাকায় বাড়ি তৈরি কাজ করছেন। শিমুল তার গ্রামের বাড়িতে জমি কিনেছেন ও তাওহিদ পরিবারের চিকিৎসার জন্য খরচ করেছেন।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আশুলিয়ার চেতনা মাল্টিপারপাসের ১০ ভয়ংকর প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪

কক্সবাজারের ঝিলংজা থেকে দশহাজার পিস ইয়াবা সহ মাদক কারবারি কে আটক করেছে র‍্যাব-১৫

কেরানীগঞ্জ থেকে পুলিশের এএসপি পরিচয়দানকারি প্রতারককে আটক করেছে র‍্যাব-১০