রাজধানীর উত্তরখান থেকে প্রতারনার অভিযোগ ৭ জন কে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১

রাকিবুল ইসলাম সোহাগঃ- রাজধানীর উত্তরখান এলাকা হতে সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড নামক নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের  মাধ্যমে প্রতারণা পূর্বক বিপুল সংখ্যক চাকরি প্রার্থীদের অর্থ আত্মসাৎ করা চক্রের ০৭ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১



র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনী, বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত চাঞ্চল্যকর অপরাধে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে র‌্যাব জনগনের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।


রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন যাবত ডিজিটাল প্লাটফর্মে চাকুরী দেয়ার নামে ভূয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে যেমন- Ex-army arms body guard, House Manager/Caretaker, Security Supervisors, Security guard। এই ধরনের আকর্ষনীয় অনলাইন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একটি চক্র প্রতারনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে বলে জানা যায়। তারা পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের এমএলএম কোম্পানীর বিভিন্ন প্রজেক্টে সাধারন মানুষকে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে আসছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই প্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। 


এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং তারিখ আনুমানিক ১৬৩০ ঘটিকায়  র‌্যাব-১, উত্তরা, ঢাকা এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিএমপি ঢাকার উত্তরখান থানাধীন আটিপাড়া বাজারস্থ মোঃ মাসুদ রানা এর মালিকানাধীন ‘মা মনোয়ারা সুপার মার্কেটের’ ৪র্থ তলায় সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ অফিসে অভিযান পরিচালনা করে এমএলএম প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য ১) মোসাঃ সামসুন্নাহার @ মায়া (৩৩), (এমডি- সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ), স্বামী-মোঃ জুয়েল ভূইয়া, জেলা-নওঁগা, ২) মোঃ জুয়েল ভূইয়া (২৬), (জিএম- সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ), পিতা-মোঃ আরজ উদ্দিন ভূঁইয়া, জেলা-ব্রাহ্মনবাড়িয়া, ৩) মোঃ কামরুজ্জামান @ ডেনিস (২৪), (ডিজিএম- সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ), পিতা-মোঃ সুলতান মাহমুদ মন্ডল, জেলা-কুড়িগ্রাম, ৪) মোসাঃ ফারহানা ইয়াছমিন @ সুবর্ণা আক্তার (২৩), (রিসিভশনিস্ট- সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ), পিতা-মোঃ আলফাজুর রহমান @ ফারুক, জেলা-নওঁগা, ৫) মোঃ মেহেদী হাসান(২১), (মার্কেটিং অফিসার- সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ), পিতা-মোঃ আবুল কালাম আজাদ, জেলা-ময়মনসিংহ, ৬। মোঃ আল মামুন @ মাসুদ (২১), (মার্কেটিং অফিসার- সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ) পিতা-মোঃ জসীম উদ্দিন, জেলা-নেত্রকোনা, ৭) মোঃ তাজবির হাসান @ লোহান (১৯), (মার্কেটিং অফিসার- সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ), পিতা-মোঃ জামাল হোসেন, জেলা-ব্রাহ্মনবাড়িয়াদের’কে গ্রেফতার করে। এসময় ধৃত অভিযুক্তদের নিকট হতে ০৫ টি ভূয়া নিয়োগপত্র, ৮০ টি জীবন বৃত্তান্ত ফরম, ০১ বক্স ভিজিটিং কার্ড, ০১ টি মানি রিসিট বই, ১০১ টি ভর্তির ফরম ও অঙ্গীকারনামা, ০২ টি সীল ১৫ টি আইডি কার্ড, ০৩ টি রেজিষ্টার, ০৮ টি মোবাইল ফোন,  ০৮ পাতা চাকুরী বিজ্ঞাপনের স্ক্রিনশট এবং নগদ ২০,৪০০/- টাকা উদ্ধার করা হয়। 

ধৃত অভিযুক্তদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ এমএলএম প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। উক্ত এমএলএম কোম্পানীটির নাম “সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড” এবং রাজধানীর উত্তরখান এলাকায় তাদের অফিস। প্রতারক চক্রটি ডিজিটাল প্লাটফর্মে তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। ''Sinthiya Security Service Limited'' হলো তাদের Facebook page। এই চক্রটি তাদের কোম্পানীতে ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, এবং তাদের অধীনে বিভিন্ন অফিস, ব্যাংক, এটিএম বুথ, থ্রী স্টার এপার্টমেনট, গার্মেন্টস-টেক্সটাইল, মিল-ফ্যাক্টরী, বিদুৎ পাওয়ার প্লান্ট, মেট্রোরেল হেড অফিস, চায়না প্রজেক্টসহ আরও কিছু জাতীয়/আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানের লাভজনক পদে কিছু কর্মচারী নিয়োগের জন্য তাদের ফেসবুক পেজ এ বিজ্ঞাপন দিত। 

 

তাদের অফিস হতে চাকুরী প্রার্থীদের মোবাইলে ফোন দিয়ে একটি নির্দিষ্ট তারিখে অফিসে এসে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য বলা হয়। নির্দিষ্ট তারিখে চাকুরী প্রার্থীরা ইন্টারভিউ এর জন্য অফিসে আসার পর তাদের নিকট হতে ভর্তি ফরম, ট্রেনিং, এবং আইডি কার্ড বাবদ ১২,৫০০/- টাকা জামানত আদায় করা হতো এবং তাদের জানানো হতো পদ অনুসারে তাদের মাসিক ১০/১৫ হাজার টাকা বেতন প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে উক্ত সিকিউরিটি অফিসে যোগদান করলে তাদের নিয়োগপত্রে উল্লেখ করা হতো প্রতি মাসে নতুন নতুন চাকুরী প্রার্থী সংগ্রহ করতে হবে এবং নতুন চাকুরী প্রার্থী সংগ্রহের ভিত্তিতে কমিশন হিসেবে তাদের বেতন প্রদান করা হবে মর্মে আশ্বাস প্রদান করা হতো। পরবর্তীতে ভিকটিমরা উক্ত কোম্পানীটির প্রতারণার বিষয়ে বুঝতে পেরে জামানতের টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন টালবাহানা করতে থাকে এবং টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এছাড়াও ধৃত অভিযুক্ত বিগত ০৬ মাসে প্রায় ৭০০/৮০০ জন চাকুরী প্রার্থীকে তাদের কোম্পানীর নিয়োগ ফরম পূরণ করতঃ তাদের নিকট হতে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় মর্মে জানা যায়। গত ০৮ মাস যাবৎ সিকিউরিটির গার্ড নিয়োগের নামে কোম্পানী চলছিলো কিন্তু তারা কোন সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দিয়েছে মর্মে কোন তথ্য উপস্থাপন করতে পারেনি ।


উল্লেখ থাকে যে, অভিযুক্ত সামসুন্নাহার @ মায়া এবং মোঃ জুয়েল ভূইয়া একটি সংঘবদ্ধ এমএলএম প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। সামসুন্নাহার @ মায়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং মোঃ জুয়েল ভূইয়া মহাব্যবস্থাপক হিসেবে “সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ” এ কাজ করে। অভিযুক্ত সামসুন্নাহার @ মায়া গত ২০২০ সালে রাজধানীর ঢাকার দক্ষিণখান থানার মধ্য আজমপুর, সংগ্রামী স্মরনী রোড বি এলার্ট সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড এর মার্কেটিং অফিসার পদে চাকুরী করত।  পরবর্তীতে গত ০৮ মাস যাবৎ “সিনথীয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিঃ” নামক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা শুরু করে এবং চাকুরী প্রত্যাশী দরিদ্র ছাত্র/ছাত্রী/জনগণকে টার্গেট করে প্রতারণা করে আসছে। আরও উল্লেখ্য যে তাদের কোম্পানী আইন সম্পর্কে কোন রকম ধারনা নেই এবং এ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দাবী করলেও তাদের কোন ধরণের সরকারী অনুমোদন কিংবা রেজিষ্ট্রেশন নাই।


 ধৃত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আশুলিয়ার চেতনা মাল্টিপারপাসের ১০ ভয়ংকর প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪

কক্সবাজারের ঝিলংজা থেকে দশহাজার পিস ইয়াবা সহ মাদক কারবারি কে আটক করেছে র‍্যাব-১৫

কেরানীগঞ্জ থেকে পুলিশের এএসপি পরিচয়দানকারি প্রতারককে আটক করেছে র‍্যাব-১০