এডভোকেট মিতুর প্রান কেড়ে নিলো যারা তাদের ফাঁসি চাই,নিহতের পরিবার


                       ছবি সংগৃহীত 

মাদারীপুর থেকে-শিহাব উদ্দিন- যে মেয়েটি ছিল পরিবারের বাবা-মায়ের চোখের মণি আর দুই ভাইয়ের অহংকার। হঠাৎ তার এমন মৃত্যুর সংবাদ যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না পরিবার। 


পরিবারের ধারণা, তাদের আদরের সন্তানকে হত্যা করেছে পাষণ্ড স্বামী। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের বাহেরান্ধী গ্রামের মোশারফ ফকির ও আকলিমা দম্পতির মেয়ে মিতু ফকির (২৭)। দুই ভাই কৌশিক আহম্মেদ তানভীর (২২) ও আনিম ফকিরের (১৭) একমাত্র বোন মিতু। 

ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী ছিলেন মিতু। প্রচুর পড়াশোনা করতেন। প্রতিটি পরীক্ষার মেধা তালিকায় লিখাতেন নিজের নাম। তার সাফল্য ধরে রেখেছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কলেজ জীবনের প্রতিটি ধাপে। মাদারীপুর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে আইন বিভাগে পড়েছেন ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্দান ইউনিভার্সিটিতে। সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকা মহানগর জজকোর্টে আইনজীবী পেশায় কর্মরত ছিলেন। 


কোনো এক বার কাউন্সিলের পরীক্ষা দিতে গিয়ে পরিচয় হয় গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের আটাসী বাড়ি এলাকার আজিবর রহমান তালুকদারের ছেলে মিরাজ তালুকদারের সঙ্গে। মিরাজ তালুকদারও পড়াশোনা করতেন আইন বিভাগে। 


দুজনের পরিচয়ের শেষে উভয় পরিবারের সম্মতি নিয়ে গত ৪ মাস আগেই বিয়ে হয় মিতু আর মিরাজের। 


মিতু ঢাকার একটি হোস্টেলে থাকতেন আর মিরাজ শ্যামপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। গত বৃহস্পতিবার মিরাজ মিতুকে তার বাসায় বেড়ানোর কথা বলে নিয়ে যায়। তারপর আর পরিবারের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি মিতুর। 


গতকাল শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) রাতে ঢাকার শ্যামপুরের করিমুল্লাহবাগ ইস্টার্ন হাউজিংয়ের একটি বাড়ির পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচানো ফাঁস লাগানো অবস্থায় মিতুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন রাতে থানা থেকে মিতুর মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারে পরিবার। 



শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে বাহেরান্ধী এলাকায় মিতুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মিতুর এ মৃত্যু ছুঁয়ে গেছে পুরো বাড়িতে। বিষাদের ছায়া আর স্বজনদের আহাজারিতে বইছে শোকের মাতম। মিতুর মা আকলিমা বেগম কান্না করতে করতে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন। মিতুর মরদেহ কখন আসবে সে অপেক্ষায় আছেন স্বজনরা। এদিকে তাদের আদরের মিতুকে একবারের জন্য পাড়া-প্রতিবেশীরাও ভিড় জমাচ্ছেন বাড়িতে। সান্ত্বনা দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করছেন মিতুর মাকে। 



মিতুর মা আকলিমা বেগম আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘মিতু আমার চোখের মণি ছিলো। এইভাবে চলে যাবে ভাবতেও পারছি না। আমার মাইয়ারে ফিরাই দাও। যারা আমার মাইয়ারে আমার থেকে কাইড়া নিছে আল্লাহ ওদের কঠিন বিচার করুক। ওর আব্বা আর আমি এখন ওরে ছাড়া কেমনে বাঁচুম।’


মিতুর ফুফু ডলি বেগম বলেন, 'আমাদের মেয়েটা এতোটা শান্ত ছিলো। কাউকে কখনোই কিছু বলতো না, আর প্রচুর মেধাবী ছিলো। ৭ দিন আগেও বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। আগামী ডিসেম্বর মাসে ওর আবার বাড়িতে আসার কথা ছিল। এটা পরিকল্পিত খুন, ওর স্বামী মিরাজ ওকে খুন করে আত্মহত্যার মিথ্যা নাটক সাজিয়েছে। আমরা আইনের কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।'



মিতুর চাচাতো ভাই আফজাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে মিতু না। মিতু ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা নিয়ে থাকতো। এটা সাজানো ঘটনা। মিরাজই মিতুকে হত্যা করেছে। আমরা মিরাজের ফাঁসি চাই।

 

এ বিষয়ে মিতুর ফুফাতো ভাই বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাইরুল হাসান জুয়েল জানান, ঘটনার রাতে মিতুর স্বামী শ্যামপুর থানায় গিয়ে পুলিশকে জানায় মিতু রাগ করে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। এই বিষয়টিই আমাদের রহস্যজনক মনে হয়েছে। যদি মিতু রাগ করে ঘরের দরজা বন্ধও করে দেয় প্রথমে তার স্বামীর উচিত দরজার লক ভেঙে ফেলার ব্যবস্থা করা এবং প্রতিবেশীদের ডেকে আনা। অথচ সে তা না করে সময়ক্ষেপণ করে থানায় গিয়েছে পুলিশের সহযোগিতা চাইতে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবি জানাই।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আশুলিয়ার চেতনা মাল্টিপারপাসের ১০ ভয়ংকর প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪

কক্সবাজারের ঝিলংজা থেকে দশহাজার পিস ইয়াবা সহ মাদক কারবারি কে আটক করেছে র‍্যাব-১৫

কেরানীগঞ্জ থেকে পুলিশের এএসপি পরিচয়দানকারি প্রতারককে আটক করেছে র‍্যাব-১০