র‍্যাব-১ এর সাড়াশি অভিযানে ০৫ ছিনতাই কারি আটক বিপুল পরিমাণ মোবাইল উদ্ধার

রাকিবুল ইসলাম সোহাগ - র‌্যাব-১ এর ছিনতাই বিরোধী বিশেষ অভিযানে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী এবং রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার ছিনতাইকারী চক্রের অন্যতম মূলহোতা শরীফ হোসেন (২২)সহ ০৫ সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার। বিপুল পরিমান চোরাই মোবাইল সেট উদ্ধার!


র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আপোষহীন ভাবে বিভিন্ন অপরাধ দমনে ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে র‌্যাব এ পর্যন্ত জঙ্গি, অপহরণকারী, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, প্রতারকচক্র, মাদক ব্যবসায়ী, এজাহারনামীয় আসামী, মলম/অজ্ঞান পার্টি, চোরাকারবারীদের  গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। 

রাজধানীর উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর ও গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় ছিনতাই চক্রের তৎপরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকা হতে অন্যান্য জেলা অভিমুখে যাতায়াতকারীদের এক বিশাল অংশ আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা দিয়ে ভ্রমন করার সুযোগে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র নিরীহ পথচারীদের সর্বস্ব ছিনতাই করছে। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা নিরীহ মানুষকে অস্ত্রাঘাত করে, প্রাইভেটকার, মোটর সাইকেল, গাড়ী, টাকা পয়সা, মোবাইল, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি ছিনতাই করে জন জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে। বিষয়টি র‌্যাবের দৃষ্টিগোচর হলে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং বর্ণিত এলাকায় ছিনতাই এর সাথে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এক পর্যায়ে গত ০৫ অক্টোবর ২০২২ ইং তারিখে র‌্যাব-১ কর্তৃক গাজীপুর টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন ঢাকা ময়মনসিংহ রোড এলাকা হতে ছিনতাইকারী চক্রের ০৭ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উত্তরার হাউজ বিল্ডিং থেকে টঙ্গি স্টেশন রোড পর্যন্ত ছিনতাইকারী চক্রের অন্যতম মাষ্টারমাইন্ড শরীফ হোসেন (২২) ও তার সহযোগীদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং ছিনতাইকারী চক্রকে গ্রেফতারে আরো তৎপর হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ অক্টোবর ২০২২ ইং তারিখ আনুমানিক রাত ১০০০ ঘটিকায় র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী এলাকায় ছিনতাই বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ছিনতাইকারী চক্রের অন্যতম মূলহোতা ১) মোঃ শরীফ হোসেন (২২), পিতা- মোঃ বাবুল মিয়া, থানা- বাইলাকান্দি, জেলা- রাজবাড়ি এবং তার সহযোগী ২) আব্দুল্লাহ বাবু (২৩), পিতা- মৃত সামাদ আলী, থানা- গোপালপুর, জেলা-টাঙ্গাইল, ৩) মোঃ শ্যামল হোসেন @রাব্বি (২৩), পিতা-মোঃ ফিরোজ হোসেন, থানা-নবাবগঞ্জ, জেলাঃ ঢাকা’কে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ধৃত আসামীদের নিকট হতে ছিনতাইকৃত ০১ টি মোটর সাইকেল, ১০ টি মোবাইল ফোন, ০১ টি হাত ঘড়ি এবং নগদ ২৫,৬৩৫/- টাকা উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে ধৃত আসামীদের দেয়া তথ্যমতে অদ্য ২১ অক্টোবর ২০২২ ইং তারিখ আনুমানিক ০৫৪৫ ঘটিকায় র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ছিনতাই চক্রের অপর সক্রিয় সদস্য ১) নাছির রাজ (৩০), পিতা- মোঃ বাবুল মৃধা,  থানা- টঙ্গী পূর্ব, জেলা- গাজীপুর, ও ২) সাজেদুল আলম @শাওন (২১), পিতা- মৃত আনোয়ার হোসেন,  থানা- সোনাইমুড়ি, জেলা- নোয়াখালীদের’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এসময় আসামীদের নিকট হতে ছিনতাইকৃত ৪৯ টি মোবাইল, ০২ টি সিপিউ, ০২ টি মনিটর, ০২ টি মাউস, ০২ টি কি-বোর্ড, ০২ টি ক্যাবল, ০১ টি সিসি ক্যামেরা, ০১ টি ডিভিআর, ০১ টি চার্জার, ০১ টি হাত ঘড়ি, ০২ টি ভিসা কার্ড এবং নগদ ৩,৭৫০/- টাকা উদ্ধার করা হয়। 

ধৃত আসামী শরীফ হোসেন (২২) এ চক্রের অন্যতম মূলহোতা ও মাষ্টারমাইন্ড। সে উত্তরা আজমপুর হতে আব্দুল্লাপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে টঙ্গি স্টেশন রোড পর্যন্ত সড়কের ছিনতাইকারী চক্রের দলনেতা। সন্ধ্যা হতে গভীর রাত পর্যন্ত ছিচকে চোর ও ছিনতাইকারী চক্র চলন্ত গাড়ি হতে থাবা দিয়ে কিংবা অন্ধকারে নিরীহ পথচারীদের জিম্মি করে যে সকল মোবাইল ফোন ছিনতাই করতো সে সেই মোবাইলগুলো তার কাছে জমা করত। সে স্বল্পমূল্যে এ সকল মোবাইল কিনে ধৃত অপর দুই আসামী আব্দুল্লাহ বাবু ও শ্যামলের মাধ্যমে বাজারে বিক্রি করত। সে গত ০৫ বছর ধরে এ কাজের সাথে জড়িত। একদিনে শরীফ সর্বোচ্চ ৫০ টি পর্যন্ত মোবাইল ফোন সংগ্রহ করার রেকর্ড করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে  জানা য়ায়। 

ধৃত আসামী আব্দুল্লাহ বাবু (২৩) ও শ্যামল (২৩) ছিনতাইকৃত মোবাইল ও অন্যান্য মালামাল বিক্রয়ের কাজে জড়িত। তারা ধৃত আসামী শরীফ এবং গত ০৫ অক্টোবর ২০২২ তারিখ র‌্যাব-১ কর্তৃক গ্রেফতারকৃত আরেকটি ছিনতাইকারী চক্রের অন্যতম হোতা জয় (২২) এর কাছ থেকে চোরাইকৃত মোবাইল সংগ্রহ করে বিক্রয়ের কাজ করত। তারা বিভিন্ন দোকান, অনলাইন প্লাটফর্ম ও বিভিন্ন জনের কাছে খুচরা হিসেবে ও এসব মোবাইল বিক্রি করত। তারা ছিনতাইকৃত মোবাইল বাজারমূল্যের চাইতে প্রায় অর্ধেকেরও কম মূল্যে বিক্রি করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করত। 

ধৃত আসামী নাছির (৩০) ও শাওন (২৪) মোবাইল ইঞ্জিনিয়ার। টঙ্গি বাজারে নাছিরের একটি মোবাইল মেরামতের দোকান রয়েছে। সে উক্ত দোকানে বৈধ ব্যবসার আড়ালে চোরাই মোবাইল এর লক খোলা ও ওগঊও পরিবর্তনের কাজ করে থাকে। সে ০৩ বছর যাবৎ নিজস্ব দোকানে ব্যবসা করে আসছে। নিজের দোকানে ব্যবসা শুরু করার পূর্বে নাছির অন্য একটি দোকানের কর্মচারী ছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। শাওন (২১) একটি মোবাইল মেরামত দোকানের কর্মচারী। সে ৫০০/১০০০ টাকার বিনিময়ে ছিনতাইকৃত মোবাইলের লক খোলা এবং IMEI পরিবর্তনের কাজ করত। সে বিগত ০৩ বছর যাবৎ এ কাজ করে আসছে মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে।

ধৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার ছিনতাইকারী চক্রের অন্যতম মূলহোতা মোঃ শরীফ হোসেন (২২)। তার সহযোগী ধৃত ০৪ জনসহ চক্রের প্রতিটি সদস্য বর্ণিত এলাকায় তার নির্দেশে ছিনতাইয়ের মালামাল বিক্রির কাজ করে থাকে। তারা প্রত্যেকে বৈধ পেশার আড়ালে ছিনতাইকারী চক্রের মদদাতা ও আশ্রয়দাতা হিসেবে ভূমিকা পালন করছে মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আশুলিয়ার চেতনা মাল্টিপারপাসের ১০ ভয়ংকর প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪

কক্সবাজারের ঝিলংজা থেকে দশহাজার পিস ইয়াবা সহ মাদক কারবারি কে আটক করেছে র‍্যাব-১৫

কেরানীগঞ্জ থেকে পুলিশের এএসপি পরিচয়দানকারি প্রতারককে আটক করেছে র‍্যাব-১০