অপরিচিত মোবাইলে পরিচয়ে নগ্ন ভিডিও ধারন করে ব্লাকমেইল করে চাঁদাবাজির অভিযোগে ২ নারী সহ আটক ৬ প্রতারক


মহানগর প্রতিনিধি(ঢাকা উত্তর)- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অজ্ঞাত মোবাইল নম্বরে পরিচয়ের সূত্র ধরে অন্তরঙ্গ ছবি/ভিডিও ধারণ করে  ব্ল্যাকমেইলিং ও পর্ণোগ্রাফির মাধ্যমে অপহরণ ও চাঁদাবাজ চক্রের মূলহোতা ও ০২ জন নারীসহ মোট ০৬ জনকে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১॥ ০১ জন ভিকটিম উদ্ধার।

গত ২৯ আগষ্ট ২০২২ তারিখে আনুমানিক ১৯১৫ ঘটিকায় একজন ভুক্তভোগীর ভাই র‌্যাব-১, উত্তরা, ঢাকায় এসে অভিযোগ করে যে, অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ভিকটিমকে কৌশলে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে ভিকটিমকে আটক রেখে মারধর করে তার কাছে থাকা সব কিছু ছিনিয়ে নেয় এবং তার মুক্তির জন্য ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা চাঁদা দাবী করে। ভিকটিম এর ভাই নিরুপায় হয়ে এতদ্সংক্রান্তে র‌্যাব-১ এর নিকট একটি লিখিত অভিযোগ করে আইনগত সহায়তা কামনা করেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বর্ণিত ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

 এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ আগস্ট ২০২২ তারিখ আনুমানিক ২১৩০ ঘটিকায় র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন মুলাইদ মধ্যপাড়া সাকিনস্থ টুটুলের দক্ষিণমুখী বিল্ডিংয়ে অভিযান পরিচালনা করে পর্ণোগ্রাফার, অপহরণ ও চাঁদাবাজ চক্রের মুলহোতা ১) মেহেদী হাসান সঞ্চয় (১৯), পিতা-আনোয়ার হোসেন, গাজীপুর এবং তার সহযোগী ২) লিপি আক্তার @ স্বর্ণা (৩৮), স্বামী-মিজানুর রহমান, জেলা-গাজীপুর ৩) মোছাঃ লাভলী আক্তার (৩৯), স্বামী- বিল্লাল হোসেন, জেলা-ময়মনসিংহ, ৪) আবু হানিফ (৩৪), পিতা-নবী হোসেন ফকির, জেলা-ময়মনসিংহ, ৫) মোঃ বাদল মিয়া(৩৮), পিতা-মৃত জনাব আলী, জেলা-ময়মনসিংহ, এবং ৬) মোঃ গোলাম রাব্বী (২০), পিতা-মোঃ দুলাল মিয়া, জেলা-গাজীপুরদের’কে গ্রেফতার করে এবং ০১ জন ভিকটিমকে উদ্ধার করে। এসময় ধৃত অভিযুক্তদের নিকট হতে অশ্লীল ছবি ও গোপন ভিডিও ধারণ কাজে ব্যবহৃত ০৭ টি মোবাইল ফোন, ১টি লোহার পাত এবং নগদ ২৪০/- টাকা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামীরা বর্ণিত অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততার তথ্য প্রদান করে। 

ধৃত অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। এ চক্রের মূলহোতা মেহেদী হাসান সঞ্চয় এবং গ্রেফতারকৃত অন্যরা তার অন্যতম সহযোগী। এই প্রতারক চক্রের নারী সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মোবাইলে অপরিচিত নম্বরের মাধ্যমে বিভিন্ন পুরুষের সাথে পরিচিত হয়ে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে তোলে। প্রেমের সর্ম্পকের এক পর্যায়ে প্রতারণার স্বীকার ব্যক্তিকে প্রলোভন দেখিয়ে নির্দিষ্ট একটি বাসায় আমন্ত্রণ জানায়। পরবর্তীতে ভ্ক্তুভোগী উক্ত চক্র কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে কথিত প্রেমিকার সাথে দেখা করতে আসলে চক্রের অন্যান্য সদস্যরা ভুক্তভোগীকে আটকে রেখে উক্ত স্থানে অসামাজিক কার্যকলাপ হচ্ছে এই অভিযোগে ভুক্তভোগীদের নগ্ন ভিডিও ধারণ করে। এরপর এই ভিডিও তাদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হবে মর্মে ভয়ভীতি দেখিয়ে সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় এবং উক্ত ব্যাক্তির আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ১০,০০০/-(দশ হাজার) টাকা থেকে ১,০০,০০০/-(এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত মু্িক্তপণ হিসেবে চাঁদা দাবি করে। পরবর্তীতে দাবীকৃত টাকা ভুক্তভোগী বিকাশ সহ অন্যান্য মাধ্যমে প্রদান করলে উক্ত ভুক্তভোগীকে চক্রটি ছেড়ে দেয়। ভুক্তভোগী যদি পরবর্তীতে এই ঘটনা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানায় তবে ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে এই মর্মে চক্রটি ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। ফলে উক্ত ঘটনা পরবর্তীতে অপ্রকাশিত থেকে যায়। 

ধৃতদের অধিকতর জিঞ্জাসাবাদ ও তদন্তে দেখা যায় যে, ধৃত আসামী লিপি আক্তার @ স্বর্ণা এর নিকট হতে উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোনে প্রায় ১৫/২০ জনের আপত্তিকর/অশ্লীল ভিডিও রয়েছে। এছাড়াও উক্ত আসামীর উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোনে গত মার্চ ২০২২ হতে অদ্যাবধি পর্যন্ত লিপি আক্তার@স্বর্ণা কর্তৃক রেকর্ডকৃত বিভিন্ন ভিকটিমকে ফাঁদে ফেলানোর পরিকল্পনার প্রায় ৪০০/৫০০টি অডিও কল রেকর্ড পাওয়া যায়। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী উক্ত চক্রটি এই কৌশল অবলম্বন করে গত মার্চ ২০২২ হতে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ২ থেকে ৩ জনকে জিম্মি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছে মর্মে স্বীকার করে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আশুলিয়ার চেতনা মাল্টিপারপাসের ১০ ভয়ংকর প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪

কক্সবাজারের ঝিলংজা থেকে দশহাজার পিস ইয়াবা সহ মাদক কারবারি কে আটক করেছে র‍্যাব-১৫

কেরানীগঞ্জ থেকে পুলিশের এএসপি পরিচয়দানকারি প্রতারককে আটক করেছে র‍্যাব-১০