নারী ও শিশু হাসপাতালে উদ্ধার হওয়া লাশের পরিচয় নিশ্চিত হত্যা মামলা দায়ের

রাকিবুল ইসলাম সোহাগ :-ঢাকার আশুলিয়ার সরকার মার্কেট এলাকায় অবস্থিত নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে থেকে এক তরুণীর লাশ উদ্ধারের ৩দিন পর আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এ বিষয়ে নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার (এসআই) ইউনুছ আলী।


রবিবার (১৯ জুন ২০২২ইং) এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইউনুছ আলী গণমাধ্যমকে বলেন, গত বুধবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার সরকার মার্কেটে অবস্থিত নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে থানা পুলিশকে খবর দেয়া হয় যে, এক নারীর লাশ রেখে তার স্বামী পরিচয়দানকারী এক যুবকসহ লোকজন পালিয়েছে। এই সংবাদের ভিত্তিতে ভিকটিম নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রথমে নিহতের পরিচয় পাওয়া যায় সিফা মনি হিসেবে, এরপর অনেক অনুসন্ধ্যান করে একটি জন্মনিবন্ধনের সূত্র ধরে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করেনিহতের পরিচয় পাওয়া যায়। নিহতের নাম মোছাঃ লিমা জান্নাত (১৫), সে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার সুরাজপুরের ৭ নং ওয়ার্ডের মোঃ নুরুল হকের মেয়ে। এ ব্যাপারে নিহতের বাবা বাদি হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন বলে এসআই ইউনুছ জানিয়েছেন। তরুণী লিমা জান্নাত ভিকটিমকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার শহীদ সোরাহওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে, ময়নাতদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে কিভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তরুণী হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে, অপরাধী সে যেইহোক না কেন তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
উক্ত তরুণীর লাশের বিষয়ে আশুলিয়ার সরকার মার্কেটে অবস্থিত নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মরত চিকিৎসক ডাঃ কৌশিক বাছাড় গণমাধ্যমকে জানান, নিহতের স্বামী পরিচয়দানকারী যুবক আমাদের এখানে মেয়েটির নাম বলেছিল সিফা মনি, তিনি আরও বলেন, মেয়েটিকে নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আনার অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে, তার লাশ আমাদের এখানে রেখে ওই যুবকসহ তার লোকজন পালিয়েছে, তা সিসিটিভি’র ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে।
লাশের বিষয়ে নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা হারুন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, গত বুধবার দিবাগত রাতে ওই নারীর লাশ হাসপাতালে রেখে তার স্বামী পরিচয়দানকারী একজন পুরুষ ও তার সাথে থাকা এক নারীসহ লোকজন পালিয়েছে। এরপর আশুলিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয়া হয়, বৃহস্পতিবার নিহতের লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায় আশুলিয়া থানা পুলিশ। উক্ত ঘটনার সাথে এলাকার কিছু যুবক জড়িত থাকতে পারে এবং লাশের বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এলাকাবাসীর দাবী-এ ঘটনার সঠিকভাবে তদন্তসহ জড়িতদের আটক করে আইনের আওতায় আনা জরুরি।
ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন ইয়ারপুর ইউনিয়নের লাল পাহাড় এলাকায় ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীরা সরেজমিনে যায় তথ্য সংগ্রহ করতে, সেখানে আজম নামের এক ব্যক্তি ও ইয়ারপুর ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার মোছাঃ লুৎফা বেগম এগিয়ে আসেন, মহিলা মেম্বার লুৎফা বেগম বলেন, ঘটনাস্থল এই বাড়ির মালিক আব্দুল মালেক আমার আপন চাচা। তিনি বলেন, এটা বড় কেচ, এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে শনাক্ত করা হোক, আর যারা জড়িত না ও দোষী নয়, তাদেরকে যেন হয়রানি করা না হয়, তিনি বলেন, এ বিষয়ে আপনারা একটু দেখেন। মহিলা মেম্বার লুৎফা বেগম আরও বলেন যে, আমি জানতে পারছি গত (১৩ জুন ২০২২্ধসঢ়;ইং) তারিখ রাত ১০টার দিকে আমাদের এখানকার লাল পাহাড় এলাকায় মোঃ আব্দুল মালেক চাচার টিনসেট বাড়ির একটি রুমে ভিকটিমকে নিয়ে আসে।
উক্ত বাসার লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাসা ভাড়া নেয়ার সময় রাতে দুই তিনজন যুবক ও একজন মহিলা ভিকটিমকে নিয়ে স্বামী স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাসায় দিয়ে যায়, তারা ৩দিনের বেশি বসবাস করতে পারেনি এখন এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে লোকজনের সামনে ভিকটিম তরুণীকে তার রুম থেকে বের করে একটি অটোরিক্সা যোগে রাস্তায় যাওয়ার পর লোকজন বলছিলো মেয়েটির কি হয়েছে? ওই যুবক ও এক মহিলা বলে যে, হঠাৎ করে অচেতন হয়েছে, মেয়েটিকে তাই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা অনেকেই বলেন, উক্ত বাড়ির মালিক ও তার লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলছেন না।
আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের লাল পাহাড় ঘটনাস্থলে এ বিষয়ে জানতে সরেজমিনে গিয়ে উক্ত বাড়িওয়ালা মোঃ আব্দুল মালেককে পাওয়া যায়নি, তাকে আড়াল করে স্থানীয় কয়েকজন নারী এগিয়ে আসেন, তাদের মধ্যে বাড়িওয়ালার স্ত্রীকে সরিয়ে দেন আজম নামের এক ব্যক্তি, এর কারণে বাড়ির মালিক ও তার স্ত্রীর বক্তব্য নেয়া যায়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় মুদি দোকানদার মোঃ ইমান আলী (২৬) বলেন, ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে দেখলাম একটি অটোরিক্সা আব্দুল মালেক সাহেবের বাড়ির গেটের সামনে রেখে ওই বাড়ির ভেতর থেকে একজন মেয়েকে লোকজন ধরাধরি করে নিয়ে বাহিরে আসছে, এরপর রিক্সায় নিয়ে কোথায় গেছে জানিনা। ঘটনাস্থল থেকে নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র বেশি দূর নয়, রিক্সায় গেয়ে ২০-২৫ মিনিট সময় লাগার কথা, প্রশ্ন বাকি প্রায় ১ থেকে দেড় ঘন্টার বেশি সময় কোথায় ছিলো লাশ নিয়ে কি গুম করার পরিকল্পনা ছিলো কি না? এ বিষয়ে র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা’র সদস্যগণ কাজ করছেন বলে সূত্র জানায়। র‌্যাব ও পলিশ জানায়, বাড়ির মালিক ভাড়াটিয়ার পরিচয়পত্র ছাড়া বাড়ি ভাড়া দিয়ে অপরাধ করেছেন আর এই তরুণীর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। উক্ত ব্যাপারে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আশুলিয়ার চেতনা মাল্টিপারপাসের ১০ ভয়ংকর প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪

কক্সবাজারের ঝিলংজা থেকে দশহাজার পিস ইয়াবা সহ মাদক কারবারি কে আটক করেছে র‍্যাব-১৫

কেরানীগঞ্জ থেকে পুলিশের এএসপি পরিচয়দানকারি প্রতারককে আটক করেছে র‍্যাব-১০