ক্যান্সারের মুমূর্ষু রোগী প্রেমিকা ফাহমিদাকে হাসপাতালে বিয়ে করল প্রেমিক হাসান-

 প্রেমের কাছে হেরে গেলো মরণঘাতী ক্যান্সার!



ক্যান্সারের মুমূর্ষু রোগী প্রেমিকা ফাহমিদাকে হাসপাতালে বিয়ে করল প্রেমিক হাসান- 


প্রেম-ভালোবাসার বহু শ্বাশত কাহিনী ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। তেমনি হাসপাতালের বেডে গত ৯ মার্চ ২০২২ তারিখ রাতে আরেক ভালোবাসার অমর উপাখ্যান রচনা করল হাসান ও ফাহমিদা।

চকোরিয়ার ছেলে মাহমুদুল হাসান নর্থ সাউথ থেকে এমবিএ আর চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ বাকলিয়াতে জন্ম নেয়া ফাহমিদা কামাল আইইউবি থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছে। শিক্ষাজীবনে দুজনের পরিচয়। লাবণ্যময়ী স্মার্ট সুন্দরী তরুনী ফাহমিদাকে ভাল লাগতে শুরু করে হাসানের। এর পর আস্তে আস্তে দুজন প্রেমে জড়িয়ে পরে। ভালবাসার মায়াবী বন্ধনে হয়ে উঠে দুজন দুজনার। হাতে হাত ধরে স্বপ্নেবিভোর রঙিন ভুবনে উড়তে থাকে অচেনা হাজারো পথে। সুখ আনন্দ সবই যেন ভরপুর। বিয়ে সংসার কত না মধুর সুখ চোখের কোনায়। 

কিন্তু একি এমন স্বপ্ন সুখের রঙিন উঠোনে ঘনকালো অন্ধকার। সপেদ আকাশ মেঘে ঢাকা বৈরী ঝড়ো হাওয়া সব তচনচ করে দিতে উদ্যত। ফাহমিদার স্বপ্নরাঙা মায়াবী শরীরে বাসা বাধে মরণঘাতী ক্যান্সার। ধরা পরার পর সাথে সাথে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা এভারকেয়ার পরবর্তীতে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে নেয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ একবছর চিকিৎসার পর ডাক্তাররা সাফ জানিয়ে দেয়- ফাহমিদার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়, ইঙ্গিত দেয় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। পাথর চাপা কষ্ট নিয়ে পরিবারের লোকজন ২০ বছর বয়সী ফাহমিদাকে চট্টগ্রামে নিয়ে এসে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করাই। সেখানে চলতে থাকে চিকিৎসা। কিন্তু ক্রমাগত ফাহমিদার শারিরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। 

প্রেয়সী ফাহমিদার অসহ্য কষ্ট ও বুকভাঙ্গা যন্ত্রণা প্রেমিক হাসানের সহ্য হয় না। ফাহমিদার কষ্ট হাসান ভাগ করে নিতে চায়। চোখের জল মুছে দিতে চায়, কপালে হাত রেখে বলতে চায় আমি আগের মত এখনো তোমার পাশে আছি। হাতে হাত রেখে বলতে চায় আমি তোমাকে বড্ড ভালবাসি ফাহমিদা, বড্ড ভালবাসি। তুমিই আমার জীবন তুমিই আমার সব। মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়াতে চায়। বুকে জড়িয়ে নিয়ে কষ্টগুলো নিজের করে নিতে চায়। কিন্তু তা কি করে সম্ভব! হাসান ফাহমিদার প্রেমিক হলেও সমাজের চোখে পরপুরুষ। মৃত্যুযন্ত্রণায় ফাহমিদা নিঃশেষ হতে চলেছে। 

এবার হাসান কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। ফাহমিদাকে যদি মরতে হয়, তাহলে তার বুকে মাথা রেখেই মরতে হবে। নিজের পরিবারকে নিয়ে এসে প্রস্তাব দিল সে সহসা ফাহমিদাকে বিয়ে করতে চাই । মৃত্যু পথযাত্রী ফাহমিদাকে হাসানের বিয়ে করার প্রস্তাবে সবাই হতবিহ্বল। হাসানকে বুঝানোর সব ধরনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু হাসান তার অনঢ় সিদ্ধান্তে অটল। 

অবশেষে উভয় পরিবার সম্মত হয়। বিষয়টি জানানো হয় জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা ফাহমিদাকে। অবিশ্বাস্য প্রস্তাব শুনে অপলক তাকিয়ে থাকে প্রিয় হাসানের দিকে। ফাহমিদার চোখেমুখে ফুটে উঠে নির্মল স্বর্গীয় হাসি। আনন্দ অশ্রুতে দুজনের পৃথিবী দোল খেতে থাকে। বাতাসে নাচতে থাকে রঙিন প্রজাপতি। 

অবশেষে বিয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়। গত ৯ মার্চ ২০২২ তারিখ বাদ এশা মেডিকেল সেন্টারে তাদের বিয়ের আয়োজন হয়। 

কনে ফাহমিদাকে পরানো হয় লাল বেনারসি শাড়ি, গলায় সোনার হার। বর হাসান পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে। আকত অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। দুজন মিলে কেক কাটে, মালা বদল হয়। খেজুর মিষ্টি খাওয়ানো হয়। 

ক্ষনিকের জন্য মরণঘাতী ক্যান্সারকে জয় করে ফাহমিদা হয়ে উঠে অন্য এক পৃথিবীর বাসিন্দা। সমস্ত স্বর্গীয় সুখ তাকে ঘিরে রাখে। হারিয়ে যাওয়া সোনালী দিনগুলো আবার যেন ফিরে পায়। আনন্দে আত্মহারা ফাহমিদার আরো বাঁচতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে হাসানের বুকে মাথা রেখে হাজার বছর বাঁচতে। 

হাসান আর ফাহমিদার এই অমর প্রেমকাব্যে প্রেমেই জয় হলো। জীবন ক্ষনিকের, জীবনের কাছে প্রেম অবিনশ্বর। প্রেম প্রীতি ভালোবাসার জয় হোক - 

তোমাকে স্যালুট হাসান। 

তোমাদের জন্য আমাদের অতল ভালোবাসা। 

আবারো বলি - ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়। ভালোবাসা শ্বাশত, অম্লান অমর।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আশুলিয়ার চেতনা মাল্টিপারপাসের ১০ ভয়ংকর প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪

কক্সবাজারের ঝিলংজা থেকে দশহাজার পিস ইয়াবা সহ মাদক কারবারি কে আটক করেছে র‍্যাব-১৫

কেরানীগঞ্জ থেকে পুলিশের এএসপি পরিচয়দানকারি প্রতারককে আটক করেছে র‍্যাব-১০