পার্লারের আড়ালে দেহ ব্যবসা দুই নারী সহ তিন জন কে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব -৪

 মোঃসোহাগ হোসেন:-


ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন এলাকা হতে ২৮ বছর বয়সে ০৫টি বিয়ে, শতাধিক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন, মানব পাচার এবং পার্লারের আড়ালে দেহ ব্যবসার অপরাধে ০২ নারী সহযোগীসহ ০৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪।


র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের নৃশংস ও ঘৃণ্যতম অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফির মতো ঘৃণ্যতম অপরাধ নির্মূলের পাশাপশি মানব পাচারের মত্য জঘণ্য অপরাধ নির্মূলে র‌্যাবের প্রতিটি সদস্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে নারী ও শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ বাসযোগ্য সমাজ তথা দেশ বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি মানব পাচার রোধে র‌্যাব-৪ এর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যাঞ্চল্যকর অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।


একাধিক ভুক্তভোগী অধিনায়ক, র‌্যাব-৪ বরাবর অভিযুক্ত শাহীন খান (২৮) এর বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফিসহ একাধিক বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করলে বিষয়টি আমলে নিয়ে র‌্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল অনুসন্ধান শুরু করে এবং অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা প্রমানিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায়, গত ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মানব পাচার ও জোরপূর্বক দেহ ব্যবসায় নিয়োজিত করার অভিযোগে নিন্মোক্ত ০৩ জন আসামী’কে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়ঃ 


(ক) শাহীন খান (২৮), জেলা-ঢাকা।

(খ) সেলিনা আক্তার (৩৫), জেলা-ঢাকা।

(গ) জান্নাতুল ফেরদৌস (৩২), জেলা-ঢাকা। 


শাহীনের উত্থানঃ গ্রেফতারকৃত আসামী শাহীন খান (২৮) একটি লম্পট চরিত্রের মানুষ। অভিযুক্ত মোঃ শাহিন ১০ই জানুয়ারি ১৯৯৩ সালে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন পাড়াগ্রাম এলাকায় জন্মগ্রহন করে। তার পিতা পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। তার পিতা গত ১২ বছর পূর্বে মৃত্যৃবরণ করে। শাহীন একটি স্থানীয় স্কুল হতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। শাহীন সুদর্শন হওয়ায় অল্প বয়সেই চারিত্রিক ও নৈতিক অধঃপতনে চলে যায়। মায়ের ইচ্ছা থাকা সত্তেও অষ্টম শ্রেণীর পর তাকে আর বিদ্যালয়ে পাঠানো যায়নি। এলাকায় উঠতি বয়সী মেয়েদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক তৈরী করা তার একটি নেশায় পরিণত হয়। চার ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট শাহিন বেপরোয়াভাবে চলাফেরা শুরু করে এবং অনৈতিক জীবন যাপনের দিকে নিজেকে অস্বাভাবিক রূপে ধাবিত করে।


শাহীনের বৈবাহিক জীবনঃ শাহীন গত ২০১৪ সালে ২১ বছর বয়সে আশুলিয়ার এক মেয়েকে জোরপূর্বক বিয়ে করে এবং এ সময় অন্য আরেক নারীর সাথে অবৈধ সর্ম্পকে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে তাকে বিয়ে করে। এর ১ বছর পর ২০১৭ সালে সাভার ব্যাংক কলোনীর এক নারীকে বিয়ে করে। ২০১৯ সালে মোহাম্মদপুর এলাকায় এক নারী’কে অবৈধভাবে ফাঁদে ফেলে নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করে এবং পরে বিয়ে করে। এখানেই শেষ নয়, শাহীনকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় যে, এই বছরের অক্টোবর মাসে আসামী সেলিনা আক্তার কেউ পূর্বের মত বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে এবং বিয়ে করে, যদিও উক্ত বিবাহের প্রমাণস্বরূপ কোন ডকুমেন্ট সে প্রদর্শন করতে পারে নাই। এছাড়াও শাতাধিক নারীর সাথে শাহিন খানের অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়। তার এই অসামাজিক ও অনৈতিক কাজের জন্য তার তৃতীয় স্ত্রী এবং মা তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে মামলা করতে বাধ্য হয়েছেন। 


গ্রেফতারকৃত সেলিনা আক্তার একটি পার্লার ব্যবসার নামে নারীদেরকে নিয়ে অবৈধভাবে দেহ ব্যবসায় নিয়োজিত করত। পার্লারে মেয়েদের কাজ শেখানোর নাম করে নিয়ে এসে অন্যভাবে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে বিপদগ্রস্থ করত। সেলিনা আক্তার মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়। ইতোপূর্বে সে থানা পুলিশ কর্তৃক আটক হয়েছিল। সম্প্রতি শাহিন খান এবং সেলিনা আক্তার উভয়ে যৌথভাবে মাদক ব্যবসাসহ দেহ ব্যবসায় নিজেদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত করে। সেলিনা আক্তার নিজকে একজন প্রভাবশালী নারী বলে এলাকায় পরিচয় দিয়ে আসছিল। সেলিনা আক্তার অষ্টম শ্রেণী পাস হলেও নিজেকে একটি স্বণামধণ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট বলে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছে। গ্রেফতারকৃত অপর আসামী জান্নাতুল ফেরদৌস তার সাভার ব্যাংক কলোনীর বাসায় গ্রেফতারকৃত শাহীন ও সেলিনা আক্তারের সাথে মিলে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দেহ ব্যবাসার স্থান রূপে ব্যাবহার করে আসছিল। 


প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত শাহীন সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের আড়ালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবিবাহিত ও বিপত্নীক হিসেবে পরিচয় ও ভুয়া ঠিকানা দিয়ে বিভিন্ন মেয়েদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে অবৈধভাবে শারীরিকভাবে মিলিত হত। শাহিন খান বিভিন্ন সময়ে নিজের বিভিন্ন ভুয়া পরিচয় প্রদান করে। কখনো শাহিন ইসলাম জীবন, কখনো শাহিন খান, কখনো মোঃ শাহিন ইসলাম নামে নিজের পরিচয় দেয়। সে ভ‚য়া সাংবাদিক আইডি কার্ড দেখিয়ে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিত। এছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শাহিন এন্টারপ্রাইজ, ব্যস্থাপনা পরিচালক, উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির পরিচয় দিত। অষ্টম শ্রেণী পাস হলেও উচ্চশিক্ষিত বলে প্রচার করত মুখোশধারী শাহীন কৌশলে ট্রাপে ফেলে বিশেষত নারীদের সাথে অনৈতিকভাবে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে ভিডিও ধারণ করে তার মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করত। শাহিনের ব্যক্তিগত মোবাইলে এর বহু তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে শাহীন উপরোক্ত অভিযোগের স্বীকারোক্তি প্রদান করে। 


গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে মানব পাচার, পর্নোগ্রাফি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন। অদূর ভবিষ্যতে এইরুপ জঘণ্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে র‌্যাব-৪ এর অভিযান অব্যাহত থাকবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আশুলিয়ার চেতনা মাল্টিপারপাসের ১০ ভয়ংকর প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪

কক্সবাজারের ঝিলংজা থেকে দশহাজার পিস ইয়াবা সহ মাদক কারবারি কে আটক করেছে র‍্যাব-১৫

কেরানীগঞ্জ থেকে পুলিশের এএসপি পরিচয়দানকারি প্রতারককে আটক করেছে র‍্যাব-১০