পরিচ্ছন্নকর্মীরাও মানুষ, তাঁদেরকে ছোট করা মানেই মানবসভ্যতার লাঞ্চনা


তুফান সাকিবঃ-

আমরা সবাই মানুষ। মানুষ হিসেবে জন্মলাভের পরপরই সকলেরই রয়েছে নিজস্ব কিছু মৌলিক অধিকার। আর এই অধিকার মানুষ তৈরি করে নি।এটা স্রষ্টাপ্রদত্ত অধিকার। যদি আমরা এর কারণ সন্ধান করতে যাই তাহলে স্পষ্ট হয় যে,একজন প্রভু পুরো পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। শুধু পৃথিবী নয় অনেক গ্রহ,উপগ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদি পৃথিবী ও পৃথিবীর বাইরে নানা ধরনের জিনিস তিনি তৈয়ার করেছেন।বিজ্ঞান যার সুস্পষ্ট ধারণা দেয়। যেহেতু এটা প্রযুক্তির যুগ। যাইহোক, পাঠক বন্ধুগণ আমি সেদিকে যাবো না। তো সৃষ্টিকর্তা এছাড়াও আরো নানা প্রজাতির জীব সৃষ্টি করেছেন। জীব উদ্ভিদকূল ও প্রাণীকূলে বিভক্ত। প্রসঙ্গগত দিকটা হচ্ছে প্রাণীকূল।এই প্রাণীকূলের ভিতরে অসংখ্য জাতি এবং প্রজাতি রয়েছে। সবগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং শ্রেষ্ঠতম জীব হচ্ছে মানুষ। এজন্যই শ্রেষ্ঠ যে,অন্যসব প্রাণীর থেকে মানুষ আলাদা। কারণ, মানুষের হিতাহিত জ্ঞান আছে। যা দ্বারা মানুষ বিশ্বভূমণ্ডল পরিচালনা করতে পারেন।পার্থক্য এখানেই।কিন্তু জগৎ জুড়ে কিছু নির্বোধ গোঁয়ার মানুষ আছেই। যাঁরা কিনা মানুষ হয়ে আরেকজন মানুষের অধিকার নিয়ে খেলা করতে পছন্দ করেন। 


মূল আলোচনাঃ-

আজকের আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে পরিচ্ছন্নকর্মীদের নিয়ে। পরিচ্ছন্নকর্মীরাও মানুষ বটে। কিন্তু সমাজ বা রাষ্ট্রের কিছু অকর্মণ্য লোক আছে যাঁরা পরিচ্ছন্নকর্মীদের ঘৃণা করে। তাঁদের দেখলে ছোট মনে করে। কেন জানি তাঁদের মূল্যবোধ  থেকে বঞ্চিত করে যথাতথাই।প্রশ্ন হচ্ছে কেন তাঁদেরকে ছোট করা হয় এবং তাঁদের কি সত্যিই মূল্যবোধ নেই? এর উত্তর ঘাটলে দেখা যায়, পরিচ্ছন্নকর্মীরাও মানুষ। তাঁদেরও মৌলিক অধিকার রয়েছে অবশ্যই।রয়েছে মানবাধিকার। তাছাড়া সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে রয়েছে তাঁদের একটি  আকাশচুম্বী মূল্যবোধের প্রয়োজনীয়তা।কিন্তু, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁদেরকে কতটা মূল্যায়ন করা হয়? তাহলে আমাদের আগে বুঝতে হবে যে,পরিচ্ছন্নকর্মী কে বা কারা?

সাধারণ অর্থে পরিচ্ছন্নকর্মী বলতে এক প্রকার শ্রেণী বা পেশাকে উদ্দেশ্য করে যাঁরা কিনা সবসময় নিয়োজিত থাকে পরিচ্ছন্নতার কাজে।এই নিয়োজিত থাকা দুই প্রকারের। ১.বেসরকারিভাবে এবং ২.সরকারিভাবে।

আগে বেসরকারি শ্রেণীর পরিচ্ছন্নকর্মীর কথা বলছি। সাধারণত বেসরকারি পরিচ্ছন্নকর্মী বলতে বোঝা যায় যে, সুইপার। সুইপারদের কাজ হলো মানুষের টয়লেটের জমা হওয়া আবর্জনা পরিষ্কার করা,বিভিন্ন হাট-বাজার,রাস্তা-ঘাট, কল-কারখানা,ব্যাবসা-প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। এ থেকে বোঝাই যাচ্ছে যে, আমাদের পরিচ্ছন্নকর্মীরা কতটা দায়িত্ব পালন করে সমাজ এবং রাষ্ট্রে।


আর যদি সরকারি শ্রেণীর পরিচ্ছন্নকর্মীর কথা বলি তাহলে বলা যায় যে, সরকারি বিভিন্ন ধরনের অফিস-আদালত,শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান,গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা,পৌরসভা, সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন জায়গার আবর্জনা পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত থাকেন হাজারো পরিচ্ছন্নকর্মী। তাঁদের কাজ হচ্ছে যেমন অফিস ক্লিনার।অফিস ক্লিনারের কাজ হচ্ছে, অফিস রুম,আসবাব, টয়লেট ইত্যাদি পরিচ্ছন্ন রাখা।তাছাড়া অফিসে চেয়ার-টেবিল, শেলফ,ডেস্ক,ফ্যান থেকে শুরু করে এককথায় অফিসের সামনের জায়গাটুকু পর্যন্ত পরিস্কার রাখা তাঁর দায়িত্বের আওতায় থাকে। পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের একজন পরিচ্ছন্ন কর্মীর তাঁর অত্র এলাকার আওতাধীন সকল রাস্তা-ঘাট,উদ্যান,শিশুপার্ক, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার বর্জ্য পরিস্কারের কাজ করতে হয়।সরকারি ক্ষেত্রে হয়তোবা অনেককেই ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পাশের যোগ্যদের নিয়োগ দেয়া হয়। তবে, অনেকাংশেই দেখা যায় পড়ালেখা ছাড়াও বংশানুক্রমিকভাবে অথবা পূর্বের কাজের ওপর ভিত্তি করে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। 


যা-ই করুক না কেন কথাটা হচ্ছে যে,উভয়ক্ষেত্রেই এদের অনেককেই কাজের তুলনায় সঠিক মজুরি থেকে বঞ্চিত করা হয়। অথবা কাজের জন্য উপযুক্ত সরঞ্জাম না থাকায় অনেককেই আবর্জনা পরিস্কারের কাজ করতে গিয়ে অকালে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়। তারপরও আমরা এদের মূল্যায়ন করতে চাই না।অবহেলা করি,ঘৃণা করি।অথচ বাস্তব জীবনে এরা না থাকলে আমাদের চারপাশের অবস্থা কেমন হতো?এদের জায়গায় কাজগুলো কারা করবে? কাজেই এসব দিক বিবেচনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, 

পরিচ্ছন্নকর্মীরাও একজন মানুষই। তাঁদেরও পরিবার আছে, সংসার আছে। জীবনের তাগিদে তাঁরাও একটি পেশা অবলম্বন করে থাকে। কাজেই কারো কাজকে ছোট করে দেখা যাবে না।পৃথিবীতে বিদ্যমান প্রত্যেকটি পেশারই গুরুত্ব আছে। সেজন্যই হয়তো সেটা পেশা হিসেবে গণ্য হয়।আর বিশেষ করে, মানবতাকে ধারণ করে পরিচ্ছন্নকর্মীদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতে হবে সকলকেই। তাঁরা যেন আর বঞ্চিত না হয়,অবহেলিত না হয়,কাজের সঠিক মূল্যায়ন পায় এককথায়, পরিচ্ছন্নকর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলকেই আরো একধাপ এগিয়ে আসতে হবে সম্মিলিত নেতৃত্বে।পরিচ্ছন্নকর্মীরা তাঁদের পেশার সঠিক মর্যাদা পাক এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে নিয়ে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। ফিরিয়ে দিতে হবে তাঁদের নায্য অধিকার।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আশুলিয়ার চেতনা মাল্টিপারপাসের ১০ ভয়ংকর প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪

কক্সবাজারের ঝিলংজা থেকে দশহাজার পিস ইয়াবা সহ মাদক কারবারি কে আটক করেছে র‍্যাব-১৫

কেরানীগঞ্জ থেকে পুলিশের এএসপি পরিচয়দানকারি প্রতারককে আটক করেছে র‍্যাব-১০