শিক্ষকতার আড়ালে অর্থ-বাণিজ্য ত্রিশালে সরকারি বৃক্ষ কর্তন করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ

লিমা


আক্তার ময়মনসিংহ::

 ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় চকরামপুর বাজারে সরকারি বৃক্ষ কর্তন করে জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চকরামপুর বাজারটি রামপুর মৌজার ১ নং খাস খতিয়ান যার এস এ দাগ নং-৮৯৫৩,হাল দাগ-২২৬৮৯,২২৬৯২ অবস্থিত।চকরামপুর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ উসমান গণির নির্দেশনায় বাজারের প্রায় ২০ টি মেহগনি সরকারি বনজ বৃক্ষ কর্তন করে সরকারি ভূমি দখল করে অবৈধ পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব।রামপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও বাজার কমিটির সভাপতিসহ এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখেও ক্ষান্ত হয়নি ভূমিখেকো উসমান গণি। সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই প্রশাসন কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবাধে দোকানঘর নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে । এমনকি দোকান ঘর নির্মানের পূর্বেই কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা অর্থ-বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি খাস জমিকে মাদ্রাসার জমি বলে বাজারের বিভিন্ন অংশ দখলে নিয়ে নিয়েছে এই অধ্যক্ষ। প্রতিষ্ঠানের মালিকানা দাবির আড়ালে নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের অযুহাতে একটু একটু করে বাজারের জায়গা দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১ লক্ষ এমনকি এর বেশি টাকার বিনিময়ে দোকানীদের ঘর ভাড়া দিয়েছে এবং প্রতিমাসে দোকানভাড়ার নামে ৪/৫ হাজার করে টাকা নিচ্ছে। অর্থলোভী ,স্বার্থান্বেষী উসমান গণি মহান পেশা শিক্ষকতার আড়ালে এইভাবেই অর্থ-বাণিজ্য করে চলেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

এ ব্যাপারে চকরামপুর বাজারের ইজারাদার জহিরুল ইসলাম সরকার মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সরকারি বৃক্ষ কর্তন করে অবৈধভাবে জায়গা দখল প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ১১ ই অক্টোবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি তরিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়ে লাল পতাকা টানিয়ে দেয়া হয়েছে।এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাজারের ইজারাদার জহিরুল ইসলাম সরকার বলেন, সরকারি ভূমি দখলের উদ্দেশ্যে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ উসমান গণি প্রকাশ্য দিবালোকে  লোকজন দিয়ে গাছগুলো কাটেন। কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই বেআইনি ভাবে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে গাছগুলো কেটে স্থাপনা নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছে।কর্তনকৃত বৃক্ষগুলো মাদ্রাসার দপ্তরি মাজহারুল ইসলামের বাড়িতে রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে ওই অধ্যক্ষ কৌশলে ফার্নিচার তৈরির জন্য কথিত রেজুলেশন তৈরি করেছেন। এ ঘটনায় ম্যানেজিং কমিটির লোকজন সহ স্থানীয়দের মধ্যে  তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কমিটির সদস্য আবুল কাশেম বলেন,অধ্যক্ষ সাহেব কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে গাছগুলো কেটেছেন। কোন ধরনের রেজুলেশন ছাড়া ম্যানেজিং কমিটির কোন ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই তিনি নিজের মত করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।

গভর্নিং বডির সদস্য মোঃ মহিউদ্দিন বলেন,  কোনও ধরনের অনুমতি ছাড়াই হঠাৎ করে অধ্যক্ষ তার নিজ উদ্যোগে বনজ বৃক্ষ গুলো কর্তন করিয়েছে।এ বিষয়ে আমরা কমিটির লোক কিছুই জানি না।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষের এমন অপরাধের তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়ে মানবাধিকারকর্মী ও পরিবেশবাদীরা বলেন, যেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বৃক্ষ নিধনের জন্য করজোড় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন সেখানে কিসের ক্ষমতাবলে তিনি এসব কাজ করেছেন ? তার খুঁটির জোর কোথায়? 

এ ব্যাপারে মাদ্রাসার শরীরেচর্চার শিক্ষক রুহুল আমিন ,

ভুমি  অফিসার একতরফা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে লাল নিশান টানিয়ে ভূল করেছেন এমনটাই মন্তব্য করে  বলেন,প্রিন্সিপাল স্যার রেজুলেশন নিয়েই গাছ কেটেছেন। মাদ্রাসার জমিতে লাগানো গাছ তিনি কেটেছেন এতে কোন অন্যায় নেই।তবে কোন ধরনের রেজুলেশন কিংবা অনুমতির কোনো কাগজ তিনি দেখাতে পারনেনি।

 উল্লেখ্য,, যেখানে দেশের পুরো প্রশাসনের যৌথ অভিযান সত্ত্বেও গাছ কাটা থেমে নেই, তখন তাদেরই-বা কী করার আছে! স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগ মামলা করা ছাড়া তেমন ভূমিকা নেয়নি। অথচ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় প্রদত্ত পরিবেশনীতি ১৯৯২ ও বাস্তবায়ন কার্যক্রম গৃহ ও নগরায়ন খণ্ডে অনুচ্ছেদ ১২-এর শুরুতেই গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে_ যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের পূর্বে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ করা, অন্যথায় শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা। আর এই পরিবেশগত প্রভাবের প্রথম পূর্বশর্ত হচ্ছে সবুজ বৃক্ষের বেষ্টনী প্রস্তুতকরণ। অন্যদিকে অনুচ্ছেদ ৭-এ পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, বন নিধন প্রতিরোধ এবং বিভাগীয় উন্নয়ন প্রকল্পে বনায়ন কর্মসূচি অন্তর্ভুক্তকরণ, যেখানে পরিবেশ আইনানুযায়ী পরিবেশ সম্পর্কিত কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে একজন পরিদর্শক কিংবা প্রয়োজনবোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে অপরাধীকে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এর চিত্র ভিন্ন ও ধীরগতিসম্পন্ন। এভাবে চলতে থাকলে পরিবেশগত দিক থেকে আমাদের যে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে হবে, সেটা অকল্পনীয় ও অত্যন্ত ভয়াবহ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আশুলিয়ার চেতনা মাল্টিপারপাসের ১০ ভয়ংকর প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪

কক্সবাজারের ঝিলংজা থেকে দশহাজার পিস ইয়াবা সহ মাদক কারবারি কে আটক করেছে র‍্যাব-১৫

কেরানীগঞ্জ থেকে পুলিশের এএসপি পরিচয়দানকারি প্রতারককে আটক করেছে র‍্যাব-১০