মেট্রোরেল প্রকল্পের মালামাল চুরি চক্রের দুই সদস্য কে আটক করেছে র্যাব 4
রাজধানীর পল্লবী এলাকা হতে মেট্রো রেল প্রকল্পের মালামাল চুরির সংঘবদ্ধ চোর চক্রের ২ সদস্য’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪ঃ চোরাইকৃত মালামালসহ একটি পিকআপ ও সিএনজি জব্দ।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র্যাবের জোড়ালো তৎপরতা অব্যাহত আছে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০০১৯ তারিখ মোঃ নাজমুল (১৮) তার মিরপুরের বাসা থেকে কাজের সন্ধানে যাওয়ার পর নিখোঁজ রয়েছে মর্মে পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে জানা যায় ডিএমপির তুরাগ থানাধীন একটি অসনাক্ত মৃতদেহ পাওয়া গেছে যা প্রায় ১ সাপ্তাহ পর নিখোঁজ ব্যক্তির পিতার মাধ্যমে শনাক্ত হয়। সে সংক্রান্তে তুরাগ থানায় একটি অপমৃত্য মামলা রুজু হয়। যার প্রেক্ষিতে র্যাবের একটি দল এটির ছায়াতদন্ত শুরু করে।
এরই ধারাবাহিকতায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২০/০৯/২০২১ তারিখ ১০.১৫ ঘটিকায় র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর পল্লবী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চোরাইকৃত বিভিন্ন মলামাল (আনুমানিক মূল্য ৫,০০,০০০/-টাকা), ০১ টি পিকআপ, ০১ টি সিএনজি, ০২ টি মোবাইলসহ সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী চক্রের নিম্নোক্ত ২ জন সদস্য’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়ঃ
(ক) মোঃ আশিক (১৯), জেলাঃ গাজীপুর।
(খ) মোঃ হারুন (৪০), জেলাঃ ঢাকা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, নিহত নাজমুল আশিক, রাসেল এবং শামীম একই সাথে কাজ করত। গত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে রাসেল এবং শামীম নিহত নাজমুলকে বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে যায়। ঐ রাতে আশিক ও তাদের সাথে বরাবরের মতো চুরির কাজে যোগ দেয়। র্যাবের অভিযানকালে আরো জানা যায় এই চক্রটি বেশকিছু দিন ধরে মেট্রোরেলের মালামালসহ অন্যান্য সরকারী কাজের মালামাল এবং বৈদ্যুতিক তার চুরির কাজ করে আসছিল। র্যাবের অভিযানে আশিক (১৯) গ্রেফতার হলে উক্ত বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। প্রসঙ্গক্রমে আশিককে জিজ্ঞাসাবাদকালে নাজমুল এর মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে প্রাথমিক ভাবে জানা যায় উক্ত ঘটনার সংক্রান্তে রাসেল, শামীম এবং আশিকের উপস্থিতিতে নাজমুল বৈদ্যুতিক তার কাটতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করে। এ সংক্রান্তে তুরাগ থানায় অপমৃত্যু মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। তারা আরোও জানায় যে, ঢাকা মহানগরীর পল্লবী থানাধীন এলাকায় পরষ্পরের যোগসাজসে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প ছাড়াও আরো গুরুত্বপূর্ন প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় লোহা, ইস্পাত, তার, মেশিন কৌশলে চুরির ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, তারা একটি বিশেষ সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী চক্রের সাথেও জড়িত। ধৃত আসামীরা পরস্পর যোগসাজোশে কিছুদিন যাবত ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প ছাড়াও আরো গুরুত্বপূর্ন প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় লোহা, ইস্পাত, তার, মেশিন কৌশলে চুরি করে খন্ড খন্ড করে কেটে তা বিভিন্ন ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রয় করে আসছিল।
অপরাধের কৌশলঃ
গত কয়েক বছর যাবত ঢাকাসহ আশপাশ জেলা সমূহে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প পরিচালিত হয়ে আসছে। উক্ত প্রকল্প সমূহের কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরন স্তুপ আকারে থাকা কালে একটি সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি দল সু-কৌশলে সুবিধা বুঝে সুযোগ মতো চুরি করে তাদের পছন্দ মতো গোপন একটি জায়গায় নিয়ে এসে সেগুলো’কে সহজে বহনযোগ্য করে বিভিন্ন ক্রেতাদের নিকট তা বিক্রয় করে থাকে। তাদের উক্ত চোরাই চক্রটি মূলত এই চুরির কাজটি নিম্নবর্ণিত ধাপে সম্পন্ন করে থাকেঃ
প্রথমে এই চোরাকারবারি চক্রটি সু-কৌশলে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেই অনুযায়ী চুরির পরিকল্পনা করে থাকে।
পরবর্তীতে চক্রটি প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন উপকরন সুবিধা বুঝে সুযোগ মতো চুরি করে তাদের পছন্দ মতো গোপন একটি জায়গায় নিয়ে লুকিয়ে রাখে।
এই ধাপে একটি গ্রুপ চোরাইকৃত উপকরন সমূহ পরিবর্তন পরিবর্ধন করে সহজে বহনযোগ্য করে থাকে। পরবর্তীতে উক্ত মালামাল সমূহ ক্রয় করে এরূপ ক্রেতাদের সাথে প্রথম ধাপের চোরাই দলের সাথে যোগাযোগ করে দেয়।
এই ধাপে মূলত চোরাইকৃত মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের কাজটি সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। এতে চোরাই চক্রটি তাদের চোরাইকৃত পরিবর্তন ও পরিবর্ধনকৃত মালামাল তাদের পূর্বে থেকে নির্ধারিত ক্রেতাদের নিকট একটি নিদিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে বিক্রয় করে থাকে। চোরাই চক্রসহ অন্যান্য চক্রের আরও অনেক পলাতক আসামী রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
র্যাব জানায় উপরোক্ত বিষয়ে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। অদূর ভবিষ্যতে এরূপ সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী দলসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে র্যাব-৪ এর জোড়ালো অভিযান অব্যাহত থাকবে।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন