বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব শাহাদত হোসেন কবির তার ছোট ভাই সাব্বিরকে নিয়ে হৃদয় বিদারক স্ট্যাটাস

 বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব শাহাদত হোসেন কবির তার ছোট ভাই সাব্বিরকে নিয়ে হৃদয় বিদারক স্ট্যাটাস



 কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ


কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের বড়চারা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হকের সুযোগ্য সন্তান বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব মো. শাহাদত হোসেন কবির তার ছোট ভাই শাহরিয়ার হোসেন সাব্বিরকে নিয়ে তার ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি থেকে হৃদয় বিদারক একটি স্ট্যাটাস দিয়ে সকলের দোয়াও সহযোগিতা চেয়েছেন।


রাত পোহাবার কত দেরি, পাঞ্জেরি?

ওর পুরো নাম শাহরিয়ার হোসেন সাব্বির। আমার ছোট ভাই। যে বছর আমি এসএসসি পরীক্ষা দেই, সেই সময় ওর জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের Disaster Science & Management বিভাগে পড়ছে। মেধাবী, উচ্ছ্ল, হাসিখুশি আর অসম্ভব খেলা-অন্তঃপ্রাণ এক সম্ভাবনাময় তরুণ। এতদিনে তার প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। ২০১৫ সালের শেষদিকে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ার সময় ওর শরীরে Acute Lymphoblastic Leukemia (ALL) রোগ ধরা পড়ে। ওই সময়টাতে ওর শারীরিক অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা করা হয়। আল্লাহর অশেষ রহমতে কেমোথেরাপি শুরুর পর থেকেই অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। কর্কটের কষাঘাতে ম্লান হয়ে যাওয়া ওর মুখে হাসি ফিরে আসে। আমরা ভেবেছিলাম নিশি বুঝি ভোর হল। এভাবেই চলছিল। পাঁচ বছর পার হয়ে গেছিল। মাঝে একবার করে ভেলোরে সিএমসি হাসপাতাল এবং ব্যাংককে বামরুনগ্রাদ হাসপাতালেও ডাক্তার দেখানো হয়। কয়েক মাস আগে পর্যন্তও সবকিছু ঠিকঠাকই মনে হচ্ছিল।


এবছর রোজার ঈদের আগে থেকেই ওর কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। আমরা ঢাকায় চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলি। এরপর তাকে ভারতের মুম্বাইয়ে নিয়ে আসি। ওখানে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে ওকে ডাক্তার দেখানো হয়। হেমাটো-অনকোলজিস্ট প্রফেসর ডা. বাবুসাহেব ভাগল ও তাঁর সহযোগী চিকিৎসক আগের রিপোর্টগুলো দেখেন। এছাড়াও নতুন করে বোনম্যারো পরীক্ষাসহ বেশকিছু টেস্ট করানো হয়। কয়েকদিনের পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষানিরীক্ষার পর উনারা জানিয়েছেন যে, ওর বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে। ঠিক এই মুহূর্তে ওর শরীরের সীমিত কিছু জায়গায় ক্যান্সার Relapse করেছে। তবে সার্বিকভাবে ওর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। কাজেই এখন ট্রান্সপ্লান্ট করা হলে তাতে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। পরে আমরা মুম্বাইয়ের শুশ্রুত হাসপাতালে ভারতের অভিজ্ঞ অনকোলজিস্ট ও বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বিশেষজ্ঞ ডা. সুরেশ আদভানি সাহেবের সঙ্গেও দেখা করেছি। তিনিও একই মত দিয়েছেন। 


অনেকেই হয়ত জানেন, এই চিকিৎসাপ্রক্রিয়াটি অন্যান্য রোগের চেয়ে বেশ খানিকটা জটিল, সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। রোগীকে অনেকটা সময় হাসপাতালে ভর্তি অথবা ফলো-আপের মধ্যে থাকতে হবে। প্রাথমিকভাবে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে যে ধারণা পাওয়া গেছে, তাতে চিকিৎসার প্রকৃত ব্যয় বাংলাদেশী টাকায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ লাখ টাকা হতে পারে। আর বেসরকারি হাসপাতালে এটা আরও বেশি অর্থাৎ পঞ্চাশ লাখের কাছাকাছি হতে পারে। এর সাথে আনুষঙ্গিক খরচাপাতি মিলিয়ে কমপক্ষে ষাট-সত্তর লাখ টাকার প্রস্তুতি নিয়ে নামতে হবে। আর ডোনার ম্যাচিংয়ের বিষয়টিও একটি বড় ইস্যু। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে কার সঙ্গে ওর বোনম্যারো ম্যাচ করে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ হচ্ছে, যতটা দ্রুত সম্ভব ট্রান্সপ্লান্ট করে ফেলতে হবে, দেরি করা যাবে না।


আমরা মুম্বাই টাটা মেমোরিয়ালেই বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করাতে চাইছিলাম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ওখানে রোগীর প্রচণ্ড চাপ। আগামী এক বছরের মধ্যে সিরিয়াল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সব বাস্তবতা বিবেচনা করে ডাক্তারসাহেবের পরামর্শক্রমে আমরা তাই কলকাতা টাটা মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বর্তমানে সাব্বির কলকাতায় টাটা মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে ভর্তি আছে। গত ১৮ আগস্ট থেকে ওর কেমোথেরাপি শুরু হয়েছে।


আমার আব্বা একাত্তরে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘদিন। ছোটবেলায় আমার মাকে দেখেছি বাড়িতে 'মিনি মক্তব' বানিয়ে গ্রামের মেয়েদের কোরআন শরিফ পড়ানো শিখিয়েছেন। আমি তাঁদের মত অত বড় কিছু করতে পারিনি বটে, তবে বিশেষ করে চাকরিতে আসার পর থেকে সবখানে সবসময় চেষ্টা করেছি সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার.......।


নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমাদের যাত্রা সহজ করে দেবেন। তাঁর অশেষ রহমত আর আপনাদের সবার দোয়া আমাদের পাথেয়। সব অর্জনে, সব লড়াইয়েই আপনারা আমাকে শক্তি-সাহস জুগিয়েছেন। এবারও আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদের দোয়া, পরামর্শ ও সর্বাত্মক সহযোগিতা চাই। শুধু সাব্বির নয়, বরং যাঁরাই অসুস্থ আছেন, সবার জন্য আমরা দোয়া করি, মানসিকভাবে সাপোর্ট দেই। আল্লাহ সবাইকে সুস্থ রাখুন। 


আল্লাহুম্মা রাব্বান-নাসি আযহিবিল বা’সা, ওয়াশফি ওয়া আনতাশ-শাফী, লা শিফায়া ইল্লা শিফাউকা, শিফা’আল লা ইউগাদিরু সুকমা। 

(হে আল্লাহ! হে মানুষের প্রতিপালক! তুমি কষ্ট দূর কর এবং আরোগ্য দান কর। তুমিই রোগ নিরাময়কারী। তুমি ছাড়া আর কোনো নিরাময় দানকারী নেই। তুমি এমনভাবে রোগ নিরাময় করে দাও, যেন তা রোগকে নির্মূল করে দেয়।)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আশুলিয়ার চেতনা মাল্টিপারপাসের ১০ ভয়ংকর প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪

কক্সবাজারের ঝিলংজা থেকে দশহাজার পিস ইয়াবা সহ মাদক কারবারি কে আটক করেছে র‍্যাব-১৫

কেরানীগঞ্জ থেকে পুলিশের এএসপি পরিচয়দানকারি প্রতারককে আটক করেছে র‍্যাব-১০