আশুলিয়ার চেতনার প্রতারক চক্রদের রিমান্ড মঞ্জুর বেরিয়ে আসছে থড়েল বিড়াল গা ঢাকা দিয়েছে অনেকেই


 নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ঢাকার আশুলিয়ার চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির গ্রাহকদের ৩০০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার পর মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় জিডি ও অভিযোগ এবং র‌্যাব বরাবর অভিযোগ করে অবগত করেন ভুক্তভোগীরা। দৈনিক স্বদেশ বিচিত্রা  জাতীয় দৈনিক চৌকস, জাতীয় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা ও দৈনিক সকালের বাংলাসহ একাধিক গণমাধ্যমে এবং টিভিতে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি বিশেষ দল অভিযান পরিচালনা করে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ৬জন কর্মকর্তাসহ মোট ১০ জন ভয়ংকর প্রতারককে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে হাজির করার পর ৭দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ, আসামী পক্ষের আইনজীবী আদালতের কাছে জামিন চাইলে আদালত আসামীদের জামিন না দিয়ে ৩দিনের রিমান্ড মুঞ্জুর করেন। উক্ত অভিযানের খবর পেয়ে অন্যসকল জড়িত প্রতারকরা পালিয়েছে। র‌্যাব জানায়, উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতারক চক্রের পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের জন্য র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশ উন্নয়ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃসহ আরও অনেক ভয়ংকর প্রতারক চক্রের প্রতারকদের সন্ধ্যান পাওয়া যাচ্ছে।

জানা গেছে, ঢাকার প্রধান শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার জামগড়া (৬তলা) রূপায়ন স্বপ্ন নিবাস প্লট নং-০১, রোড নং-২ এ অবস্থিত চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এর হেড অফিস কর্তৃক গ্রাহকদের ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিয়ে ১৬ জন মালিক উধাও হওয়ার পর র‌্যাবের হাতে এই ভয়ংকর প্রতারক চক্রের ১০জন গ্রেফতার হওয়ার পর “বেড়িয়ে আসছে থলের বিড়াল”। এ ঘটনার পর চেতনা পরিবারের গ্রাহক নয়ন ভুঁইয়াসহ দুইজন ব্যক্তি টাকার শোকে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে র‌্যাব ও স্থানীয়রা জানান। এর আগে দুইদিন ভুক্তভোগী গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় চেতনার হেড অফিসের সামনে মানববন্ধন কর্মসুচী পালনকরাসহ আশুলিয়া থানায় একাধিক অভিযোগ ও জিডি করেন ভুক্তভোগীরা। উক্ত চেতনা প্রতিষ্ঠানটি সমবায় অধিদপ্তর ঢাকার আওতাধীন জেলা সমবায় কর্তৃক নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং-০০১৯৩। তারিখ:

১৮/০২/২০০৮ইং। সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের কাছ থেকে জানা যায়, চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডসহ নামে বে-নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রজেক্ট, গাছের বাগান, ডেইরি ফার্ম চাউলের ব্যবসা ও জমি দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে কৌশলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেকেরই কোটি কোটি টাকা জালজালিয়াতি করে হাতিয়ে নিচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। প্রতি ১ লাখে প্রতি এক মাসে ১৮শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা লাভ দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানায়, তারা লাভের আশায় প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা জমা করলে প্রথমে তারা ঠিকঠাক মতো লাভ দিলেও তার কিছুদিন পর থেকে লাভাংশ দিচ্ছেই না এবং আসল টাকা দিতে নানারকম টালবাহানা শুরু করে ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্টরা। এমনকি ভুক্তভোগীদের জানানো হয় বেশি কথা বললে টাকা ফেরত দিবে না বলে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করে প্রভাবশালী ভয়ংকর প্রতারক চক্রের সাথে জড়িতরা, তারা আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় বিভিন্ন স্থানে গোপন আস্তানা করে কিছু রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও সন্ত্রাস বাহিনী নিয়ে মিটিং, ফিটিং পরিচালনা করে আসছে বলে অনেকেই জানায়।

স্থানীয় মোঃ নাজমুল হক ইমু গণমাধ্যমকে বলেন, চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটির ১৬ জন মালিক, তাদের মধ্যে ম্যানিজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ উল্লাহ লোভ দেখিয়ে তার মায়ের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা জমা নিয়েছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিক-চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল করিম, মোহাম্মদ উল্লাহ, ইব্রাহীম খলিল, এস, এম মকবুল হোসেন, ইকবাল হোসেন সরকার, মাজাহারুল ইসলাম, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল আউয়াল, মোঃ ফজলুল হক, মোঃ মাহমুদুলহাসান, মোঃ মোমিন হোসেন, আব্দুল্লাহ আল ফারুক, মোঃ তৈমুর রহমান, সৈয়দ পারভেজ হাসাইন, মোঃ মারুফ আহমেদসহ মোট ১৬ জন মালিক, এছাড়াও এই চক্রের সাথে আরও অনেকেই জড়িত আছে। ইমু আরও বলেন, আমার আম্মুকে ভুলভাল বুঝিয়ে লাখে প্রতিমাসে ১৮০০/টাকা করে লাভ দেওয়ার কথা বলে তারা ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, টাকা ফেরত চাইলে তারা বিভিন্নভাবে টালবাহানা শুরু করে। গত ৫-৬ মাস ধরে আজ না কাল এইভাবে দিমু দিচ্ছি বলে সময় পার করছিলো। হঠাৎ করে গত বৃহস্পতিবার থেকে উক্ত প্রতিষ্ঠানের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না নিশিচত হয়ে অন্যসকল গ্রাহকরা চেতনার অফিসের সামনে আসেন এবং মানববন্ধন করেন। আমরা ৭-১০জন ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করতে গেলে, সাভার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ শাহাদত হোসেন এর অফিসে তিনি ডাকেন, এরপর স্থানীয় হালিম মৃধা’কে নিয়ে চেতনা’র অফিসে বসে গ্রাহকদের পাওনা টাকা দেয়ার বিষয়ে আলোচনার সময় র‌্যাব-৪ এর একটি বিশেষ টিম উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছেন।

আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় পল্লী চিকিৎসক মোঃ মোশারফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বোনের টাকাসহ আমার পরিবারের ১৩ লাখ টাকা মোঃ ইদ্রিস আলী সরকার হুজুরের মাধ্যমে তার ছেলে মোঃ ইকবাল হোসেন সরকারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে জমা রেখেছি, আমাদের পরিবারের সারাজীবনের সঞ্চয় এই টাকাগুলো কিন্তু পাওনা টাকা ফেরত চাইলে ইদ্রিস আলী হুজুর কাউকে না বলতে বলেন, আর বিভিন্নভাবে টালবাহানা শুরু করেন। আমি ওই প্রতিষ্ঠানের কাউকে আগে চিনি নাই, এখনও চিনিনা বা চিনতে চাইনা। আমার দাবী- হুজুরের মাধ্যমে বিশ্বাস করে টাকাগুলো দিয়েছি,তাই আমার টাকা হুজুর ও তার ছেলে ইকবাল দিতে হবে। এ ব্যাপারে মোঃ ইদ্রিস আলী সরকার হুজুরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এই টাকা লেনদেনের সময় উপস্থিত ছিলাম, সাক্ষীও ছিলাম।

আমার ছেলে ইকবাল হোসেন সরকার এই প্রতিষ্ঠানের ১৬জন মালিকের একজন। তিনি আরও বলেন, আমি আশুলিয়ায় অনেক বছর ধরে সম্মানের সাথে রয়েছি, আমার অনেক ছাত্র/ছাত্রী আছে। সুদের টাকা লেনদেন ও সেই টাকার চুক্তিনামায় সাক্ষী হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার ভুল হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, এই চক্রের সাথে ৪-৫টি প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান জড়িত।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আশুলিয়ার চেতনা মাল্টিপারপাসের ১০ ভয়ংকর প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪

কক্সবাজারের ঝিলংজা থেকে দশহাজার পিস ইয়াবা সহ মাদক কারবারি কে আটক করেছে র‍্যাব-১৫

কেরানীগঞ্জ থেকে পুলিশের এএসপি পরিচয়দানকারি প্রতারককে আটক করেছে র‍্যাব-১০